অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শিশুদের হত্যা ও আহত করার ঘটনায় রাশিয়ার সামরিক ও মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে ‘লজ্জার তালিকায়’ রেখেছে জাতিসংঘ। কিন্তু গত বছর ৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করার পরও এক চোখ অন্ধ জাতিসংঘের তালিকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা ও পঙ্গু করার ঘটনায় ইসরায়েলকে জাতিসংঘের কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইসরায়েলি বাহিনীকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ফিলিস্তিনি শিশুদের ‘অপমান’ করেছেন উল্লেখ করে বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২২ জুন) জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ইসরায়েলকে লজ্জার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘বড় ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন।
সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শিশুদের প্রতি আচরণের বিষয়ে জাতিসংঘের বার্ষিক প্রতিবেদনে গুতেরেস বলেন, ২০২২ সালে ইউক্রেনে শিশুদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তিনি মর্মাহত।
প্রতিবেদনের একটি অনুলিপির বরাতে বেশকিছু সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, গত বছর ইউক্রেনে ৪৭৭ জন শিশু নিহত হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। এর মধ্যে ১৩৬ জন সরাসরি রাশিয়ান বাহিনী ও তাদের অনুমোদিত গোষ্ঠীর কারণে মারা গিয়েছিল। একই সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী ৮০ জন শিশুকে হত্যা করেছে। অবশিষ্ট ভুক্তভোগী শিশুদের মধ্যে যুদ্ধরত অবস্থায় মারা যাওয়ায়, দুই পক্ষের কাউকেই নিশ্চিতভাবে দোষারোপ করা যায় না।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ শিশু বিমান হামলায় নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘ আরও যাচাই করেছে, রাশিয়ান বাহিনী ও অনুমোদিত গোষ্ঠীগুলো ইউক্রেনে ৫১৮ জন শিশুকে পঙ্গু করেছে এবং স্কুল ও হাসপাতালে ৪৮০টি হামলা চালিয়েছে। রুশ সশস্ত্র বাহিনী ৯১ জন শিশুকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী ১৭৫ জন শিশুকে পঙ্গু করেছে এবং স্কুল ও হাসপাতালে ২১২টি হামলা চালিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের বাহিনীকে এই তালিকায় রাখা হয়নি।
প্রতিবেদনে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ২০২২ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের সংখ্যা নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৪২ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত ও ৯৩৩ জন আহত হয়েছে। ২০২১ সালে ইসরায়েলি বাহিনী ৭৮ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করে। ইসরায়েল কখনোই শিশু হত্যার জন্য জাতিসংঘের লজ্জার তালিকায় ছিল না।
গুতেরেস বলেন, আগের প্রতিবেদনের তুলনায় গত বছর ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলাসহ নিহত শিশুদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জাতিসংঘের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলকে লজ্জার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জাতিসংঘ প্রধানের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে।
শিশু অধিকার বিষয়ক সংস্থার অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর জো বেকার বলেন, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৬ হাজার ৭০০ শিশু হতাহত হয়েছে। ২০২২ সালে আরও ৯৭৫টি ঘটনা পাওয়া গেছে। তবুও তিনি ইসরায়েলকে ‘লজ্জার তালিকা’ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত মনসুর বলেন, জাতিসংঘের তালিকা থেকে ইসরায়েলকে বাদ দেওয়া ফিলিস্তিনি জনগণ ও শিশুদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। ইসরায়েলি সরকারকে লজ্জার তালিকাভুক্ত না করে মহাসচিব একটি বড় ভুল করেছেন। ফ্যাসিবাদী উপাদানে ভরা সবচেয়ে চরম সরকার ইসরায়েলে। আপনি যদি এখনই এই সরকারকে তালিকাভুক্ত না করেন, তাহলে আপনি কখন ইসরায়েলি সরকারকে তালিকাভুক্ত করবেন?
জাতিসংঘের এ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনটি দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত। কূটনীতিকরা বলছেন, সৌদি আরব এবং ইসরায়েল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লজ্জার তালিকা থেকে দূরে থাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে। ইয়েমেনে শিশুদের হত্যা ও আহত করার অভিযোগ থাকলেও সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটকে ২০২০ সালে এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
আল-জাজিরার কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বেইস বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ- প্রথমবারের মতো নিরাপত্তা পরিষদের কোন স্থায়ী সদস্যকে ‘লজ্জার তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করা হলো। জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি এবারও বিতর্কিত, এর একটি ইসরায়েলের কারণে। ইসরায়েল ২০২২ সালে ৪২ জন শিশুকে হত্যা করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বলছেন, শিশু হত্যা কমে এসেছে বলে ইসরায়েলকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়নি। তবে ২০২১ সালে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ১১ দিন দীর্ঘ ছিল এবং ২০২২ সালের আগস্টে যুদ্ধটি মাত্র তিন দিন স্থায়ী হয়েছিল। বাস্তবতা হচ্ছে ইসরায়েল এখনও অনেক শিশুকে হত্যা করছে।
Leave a Reply